জীবজগৎ
জীবজন্তু-বস্তু অর্থাৎ মানুষ, পশুপাখি, মাছ, গাছপালা ও অণুজীব (অতি ক্ষুদ্র জীব) নিয়ে জীবজগৎ গঠিত। একে প্রধানত দুই দলে ভাগ করা যায়; যথা- উদ্ভিদজগৎ ও প্রাণিজগৎ।
উদ্ভিদজগৎ
আমাদের চারপাশে নানা ধরনের উদ্ভিদ রয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে শৈবাল ও ছত্রাকের ন্যায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্ভিদ; আবার আম, কাঁঠাল, জাম এর ন্যায় বড় বড় উদ্ভিদ। এসো এবার আমরা প্রমেই উদ্ভিদ সমপর্কে জানি।
উদ্ভিদের শ্রেণীবিন্যাস:
আমাদের পরিবেশের কতগুলো উদ্ভিদ অনেক বড়, যেমন: আম, কাঁঠাল, সুপারি গাছ ইত্যাদি। জবা, লেবু, গোলাপ, রঙ্গন ইত্যাদি উদ্ভিদ মাঝারি আকারের। মরিচ গাছ, ধানগাছ, শাপলা, ঘাস, কচুরিপানা, পুঁই শাক, লাউ, কুমড়া গাছ ইত্যাদি ছোট ছোট উদ্ভিদ। আকার ও কাণ্ডের প্রকৃতির ভিত্তিতে উদ্ভিদ তিন ধরনের; যথা - বৃক্ষ, গুল্ম ও বিরুৎ। বিরুৎ (কুমড়া গাছ) গুল্ম (মরিচ গাছ) বৃক্ষ কাঁঠালগাছ ।
যে সব উদ্ভিদের প্রধান কাণ্ড দীর্ঘ, শক্ত ও মোটা সেগুলো বৃক্ষ। বৃক্ষের প্রধান কাণ্ডকে গাছের গুড়ি বলা হয়। প্রধান কাণ্ড থেকে উপর দিকে শাখা এবং শাখা থেকে প্রশাখার সৃষ্টি হয়। এতে একটি মোটা প্রধান মল থাকে। এ মূল মাটির অনেক গভীরে প্রবেশ করে। আম, কাঁঠাল, সেগুন, মেহগনি প্রভৃতি অতি পরিচিত বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ। গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ মাঝারি আকারের। এদের কাণ্ড শক্ত তবে মোটা নয়। কাণ্ড থেকে বহু শাখা-প্রশাখার সৃষ্টি হয়। গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ দেখতে ঝোপের মতো দেখায়। এ উদ্ভিদে কোনো গুড়ি কাণ্ড নেই। মল মাটির গভীরে যায় না। জবা, রঙ্গন, গোলাপ, লেবু ইত্যাদি গাছ গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ।
বিরুৎ জাতীয় উদ্ভিদের আকার ছোট। এসব উদ্ভিদের কাণ্ড, শাখা ও প্রশাখা নরম। এ উদ্ভিদের মল মাটির উপরের সরে থাকে। ধান, সরিষা, ঘাস, কচু ইত্যাদি বিরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ। লাউ, কুমড়া, পুঁই শাক এর গাছগুলো লতানো উদ্ভিদ। এদের কাণ্ড নরম। এরাও বিরুৎ।
চর্তু শ্রেণীতে তোমরা বিভিনড়ব বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে এ সমস উদ্ভিদকে বিরুৎ, গুল্ম ও বৃক্ষ এ তিনটি ভাগে ভাগ করেছিলে। একবার চেষ্টা করে দেখ তো উপরে উলি−খিত উদ্ভিদগুলোকে নিচের ছক অনুযায়ী সাজাতে পার কিনা? তোমার পরিবেশের অন্যান্য উদ্ভিদের নামও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী উলে−খ করতে পার।
এসব উদ্ভিদের আরও বৈশিষ্ট্য হল এদের কাণ্ড, শাখা-প্রশাখা নেই, অনেক উদ্ভিদের মলও নেই। এসব উদ্ভিদের ফুল হয় না। তাই এগুলোকে অপুষপক উদ্ভিদ বলা হয়।
আবার অনেক উদ্ভিদ আছে যেগুলোর মল, কাণ্ড, শাখা-প্রশাখা ও ফুল আছে। এরা সপুষপক উদ্ভিদ। তোমাদের আশেপাশে অনেক সপুষপক ও অপুষপক উদ্ভিদ রয়েছে।
শৈবাল, ছত্রাক, মস এবং ফার্ন অপুষপক উদ্ভিদ। এ সকল উদ্ভিদের নিজ নিজ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। চর্তু শ্রেণীতে তোমরা এ সব উদ্ভিদের অনেক বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণ করেছ। শৈবাল পানি ও স্যাঁতসেঁতে জায়গায় জন্মে। শৈবাল সবুজ, এদের দেহে ক্লোরোফিল আছে। খাদ্য তৈরির জন্য এদের সূর্যের আলো প্রয়োজন। স্পাইরোগাইরা শৈবাল শ্রেণীর উদাহরণ। ছত্রাক বাসি খাবার, গোবর ও আবর্জনার স'পে জন্মে। এদের দেহে ক্লোরোফিল নেই। তাই বর্ণহীন, খাদ্য তৈরি করতে পারে না বলে এদের আলোর প্রয়োজন নেই। যেমন-ব্যাঙের ছাতা। ছত্রাক ও শৈবালের দেহকে মল, কাণ্ড ও পাতায় ভাগ করা যায় না। এদের দেহের প্রতিটি কোষ জনন কোষ উৎপনড়ব করতে পারে।
মস স্যাঁতসেঁতে মাটি, ভেজা দেয়াল বা গাছের বাকলে জন্মে। মস এর দেহে কাণ্ড ও পাতা থাকলেও মল নেই। এতে কোনো পরিবহণ কলা নেই। এরা বহুকোষী ভ্রূণ সৃষ্টি করে। এরা খাদ্য উৎপনড়ব করতে পারে।
ফার্ন সাধারণত ছায়াযুক্ত স'ানে জন্মে। ফার্ন জাতীয় উদ্ভিদের দেহ মল, কাণ্ড ও পাতায় বিভক্ত। এতে পরিবহণ কলা রয়েছে। এরা বহুকোষী ভ্রূণ সৃষ্টি করে। এ উদ্ভিদ খাদ্য প্রসুত করতে পারে। আমাদের পরিবেশে নানা জাতের ফার্ন রয়েছে। এর মধ্যে ঢেঁকি শাক একটি অতি পরিচিত ফার্নের নাম।
বহু উদ্ভিদে ফুল ও ফল হয়, তা তোমরা দেখেছ। আম গাছে মুকুল হয়। মুকুল আমের ফুল। আমের মুকুল থেকে আম হয়। আমের ভেতরে আমের আটি বা বীজ থাকে। বীজ থেকে নতুন উদ্ভিদ জনম নেয়। সপুষপক উদ্ভিদের ফুল থেকে ফল এবং ফল থেকে বীজ উৎপনড়ব হয়। তবে কোনো কোনো উদ্ভিদে ফল উৎপনড়ব হয় না। এদের সমপর্কে আমরা পরে জানব।
তোমরা জান যে, আম, বরই, নারকেল ইত্যাদি উদ্ভিদের বীজ ফলের ভেতরে থাকে। বীজ ফলের ভেতরে থাকে বলে এদেরকে আবৃতবীজ বলে। এসকল উদ্ভিদের কাণ্ড শাখা প্রশাখায় বিভক্ত। কিছু উদ্ভিদ আছে যেমন সাইকাস, পাইনাস যাদের বীজ ফলের ভেতরে থাকে না, বীজধারকপত্রে থাকে। ফল দিয়ে ঢাকা থাকে না বলে এসব বীজের নাম নগড়ববীজ। এসকল উদ্ভিদের কাণ্ডে সাধারণত শাখা-প্রশাখা থাকে না।
আম, কাঁঠাল, নারকেল ইত্যাদি উদ্ভিদের বীজ আবৃতবীজ হওয়াতে এসব উদ্ভিদকে আবৃতবীজী উদ্ভিদ বলে। অপরদিকে সাইকাস, পাইনাস ইত্যাদি উদ্ভিদের বীজ নগড়ববীজ হওয়াতে এ সকল উদ্ভিদকে নগড়ববীজী উদ্ভিদ বলে। সাইকাসের পাতা অনেকটা নারকেল পাতার মত। পাইনাসের পাতা সুচের মত।
চর্তু শ্রেণীতে তোমরা জেনেছ যে, শিম, ছোলা ও মটর বীজে দুটি বীজপত্র বা বীজদল থাকে। আবার ধান, গম, ভুট্টা বীজের বীজপত্র বা বীজদল একটি। বীজ কেমন তার ওপর নির্ভর করে আবৃতবীজী উদ্ভিদসমহকে দুটি দলে ভাগ করা হয়েছে।
যে সকল উদ্ভিদের বীজে দুটি বীজপত্র থাকে তাদের দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ বলে। আম, জাম, কাঁঠাল, বরই গাছ দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ। নারকেল, তাল, সুপারি, ধান, গম, ভুট্টা এসকল উদ্ভিদ একবীজপত্রী। এদের বীজে বীজপত্র একটি। একবীজপত্রী এবং দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের পাতা পর্যবেক্ষণ করে দেখ এদের পাতার আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। একটি আম অথবা কাঁঠাল পাতা এবং একটি ধান কিংবা ঘাসের পাতা নাও। আম কিংবা কাঁঠাল পাতার সুক্ষ্ম শিরাগুলো পর্যবেক্ষণ কর। এগুলো জালের মতো সমস পাতায় ছড়িয়ে আছে। ঘাস অথবা ধানের পাতার সুক্ষ্ম শিরাগুলো পাতার গোড়া থেকে মাথা পর্যন- সমান-রালভাবে আছে।
অনুশীলনী
ক. বহুনির্বাচনি প্রশড়ব
সঠিক উত্তরটিতে টিক (√) চিহ্ন দাও
১। বিরুৎ উদ্ভিদ কোনটি?
ক) আম গাছ খ) কাঁঠাল গাছ গ) গোলাপ গাছ ঘ) শিম গাছ
২। সাইকাস কোন ধরনের উদ্ভিদ?
ক) আবৃতবীজী উদ্ভিদ খ) নগড়ববীজী উদ্ভিদ গ) শৈবাল ঘ) অপুষপক উদ্ভিদ
৩। সমান-রাল শিরাবিন্যাস কোন উদ্ভিদের পাতার বৈশিষ্ট্য ?
ক) দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ খ) নগড়ববীজী উদ্ভিদ গ) একবীজপত্রী উদ্ভিদ ঘ) অপুষপক উদ্ভিদ
খ. শন্যস'ান পরণ কর
১। ফার্ন উদ্ভিদের কাণ্ড,...................... ও মল আছে।
২। ছত্রাক ................................. তৈরি করতে পারে না।
৩। নগড়ববীজী উদ্ভিদে .........................থাকে না।
৪। দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের পাতায় ........................... শিরাবিন্যাস দেখা যায়।
গ. সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশড়ব
১। তিনটি গুল্ম উদ্ভিদের নাম লেখ।
২। অপুষপক ও সপুষ্পক উদ্ভিদের পার্থক্য লেখ।
৩। তিনটি একবীজপত্রী ও তিনটি দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের উদাহরণ দাও।
ঘ. রচনামলক প্রশড়ব
১। সপুষপক এবং অপুষপক উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্যগুলো বর্ণনা কর।
২। নারকেল গাছ একবীজপত্রী উদ্ভিদ কেন ব্যাখ্যা কর।
৩। শৈবাল ও ছত্রাকের পার্থক্যগুলো উলে−খ কর এবং এরা মস থেকে কোন কোন বৈশিষ্ট্যে আলাদা তা লেখ।